ভিশন বাংলা ডেস্কঃ শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। চোখ-মুখ এবং পুরো শরীর ফুলে উঠেছে। চোখ ফুলে যাওয়ায় দেখতেও সমস্যা হচ্ছে তার। অসহায় অবস্থায় মরিয়ম আর্তনাদ করেছে, ‘ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান’।
তার ওপর চালানো অকথ্য নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এভাবেই আর্তনাদ করেছে গৃহপরিচারিকা লামিয়া আক্তার মরিয়ম (১০)। বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে।
মরিয়মের ভাষ্য- গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী দুইজনই কারণে-অকারণে একসঙ্গে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন, বাসায় আটকে রাখতেন, বেতের লাঠি, কাঠের বেলুন দিয়ে আমাকে মারতেন এবং মাঝে মধ্যে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন। সবশেষ সোমবার না বলে চিনি খাওয়ার অপরাধে প্রথমে বেত ও বেলুন দিয়ে মারধর করে, পরে নখে সুই ঢুকিয়ে আমার মাথার চুল কেটে দেয় তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন রাতে মরিয়মের কান্না আর চিৎকারের বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানিয়ে একটি অভিযোগ দেয় প্রতিবেশীরা। সোমবার রাতে বরিশাল নগরীর কাশীপুর আনসার ক্যাম্পের পেছনে মদিনা সড়কের আকাশ মঞ্জিলে অভিযান চালিয়ে মরিয়মকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় পুলিশকে জড়িয়ে ধরে মরিয়ম আর্তনাদ করে, ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান।
মরিয়ম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর নোয়াপাড়া গ্রামের রিকশাচালক ইকবাল সরদারের মেয়ে। মরিয়মের মা নেই। মরিয়মকে নির্যাতনের ঘটনায় গৃহকর্ত্রী কাশীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী শারমিন আক্তার আখিকে আটক করা হয়েছে। তবে আখির স্বামী আইসিবিএল ব্যাংকের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম (অঞ্জন) চৌধুরী পালিয়ে গেছেন। মরিয়মকে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশকে জবানবন্দি দিয়েছেন গৃহকর্ত্রী আখি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মরিয়ম জানায়- ৬ মাস আগে বাসার কাজের জন্য তাকে গ্রাম থেকে আনা হয়। আনার পর প্রথম প্রথম ভালো ব্যবহার করতেন আখি-আশরাফুল দম্পতি। কয়েকদিন পর কারণে-অকারণে আখি ও তার স্বামী মরিয়মের ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। বেশিরভাগ সময় বেতের লাঠি ও কাঠের বেলুন দিয়ে মারধর করতেন তারা। বাইরে যাতে শব্দ না যায় এ জন্য দরজা বন্ধ করে মারতেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়- শরীরের ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মরিয়ম। তার শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বেত ও বেলুনের আঘাত নেই। চোখের ওপর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, দুই চোখের ওপর-নিচ কালো হয়ে ফুলে গেছে, মাথায় চুল নেই, পুরো শরীর ফুলে উঠেছে তার।
মহানগর ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন- গৃহকর্মী শিশু লামিয়া আক্তার মারিয়াকে নির্যাতনের ঘটনাটি কোন এক ব্যক্তি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেইজে অভিযোগ আকারে তুলে ধরেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মোশারেফ হোসেন বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
পরবর্তীতে সোমবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশসহ বিএমপি অপরাধ ও মিডিয়া শাখার সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গৃহকর্ত্রী আখিকে আটক এবং গৃহকর্মী মরিয়মকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। অভিযানের টের পেয়ে গৃহকর্তা আশরাফুল পালিয়ে যায়।
এসি নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন- মরিয়ম পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে আখি ও তার স্বামী আশরাফুলের নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেছে। এ ঘটনায় বরিশাল বিমানবন্দর থানায় ডিবি পুলিশের এসআই ইউনুস আলী বাদী হয়ে আখি ও আশরাফুলকে (অঞ্জন) আসামি করে মামলা করেছেন।
ওই মামলায় আখিকে গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার অপর আসামি আখির স্বামী আশরাফুল ইসলাম (অঞ্জন) কে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ডিবি পুলিশ।
https://www.facebook.com/barishaltimes24x7/videos/1094353917391298/?t=0